আসামের মুদ্রার হাতেখড়ি
Written By – Priyak Chakraborty
Translated By – Naim Al Tahsin
ভারতের উত্তর পূর্ব অঞ্চলে দারুণ কিছু একটা ঘটছিলো তখন । ভারত উপমহাদেশ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন আহম রাজ্য তাদের নিজেস্ব কিছু মুদ্রা তৈরী করে যা এখন মুদ্রা সংগ্রাহকদের নিকট বহু কাঙ্খিত এবং গবেষণার বস্তু হিসেবে পরিণত হয়েছে। এই ছোট্ট সাম্রাজ্যটি মুঘলদের সাথে নিজেদের টিকে থাকার লড়াই তখনও চালিয়ে যাচ্ছিলো। তাই তাদের নিজেদেরকেই নিজেদের রাজ্যে ব্যবসা বাণিজ্য পরিচালনা করতে হতো। যে কারণে ১৭ শতকের মাঝামাঝি কোনো এক সময়ে “আহম রাজ্য” তাদের নিজস্ব মুদ্রা তৈরী করে।
আহম রাজ্যের মুদ্রার ইতিহাস, গৌরব, রাজকীয়তাকে সরলভাবে বুঝানোর জন্য ১০টি ধাপে সাজিয়েছি, যেনো নতুন সংগ্রাহকগণ সহজ়েই সুন্দরভাবে প্রাথমিক ধারনা নিতে পারে।
১) মুদ্রাগুলো সাধারণত অষ্টভুজ আকৃতির হতো যা মুঘল এবং সুলতানি মুদ্রা থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। আহম সাম্রাজ্যের গোলাকার এবং চারকোণা কয়েনও ছিলো তবে তা খুবই কম। সেগুলো হয়তো কোনো বিশেষ উপলক্ষ্য বা বাণিজ্যকে কেন্দ্র করে ইস্যুকরা হয়েছিলো।
২) প্রথম মুদ্রা তৈরী করা হয়েছিলো ১৬৪৮-১৬৬৩ সালে জয়ধ্বজ সিংহ এর রাজত্বকালে। এবং এ সাম্রাজ্যের শেষ মুদ্রা ছাড়া হয় শেষ শাসক যোগেশ্বর সিংহ এর সময়ে ১৮২১-১৮২৪ সালে।
৩) মুদ্রায় বেশিরভাগই অসমীয় ভাষার ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। তবে কিছু মুদ্রা দেবনগরী এবং পার্সিয়ান ভাষায়ও ইস্যু হয়েছিলো। আহম লিপিতেও ব্যাপক মুদ্রা তৈরী করা হয়েছিলো যখন মুঘলদের সাথে সম্পর্কের তুমুল টানাপোড়েন শুরু হয়। বাণিজ্য পরিচালনার জন্য মুদ্রায় চাইনিজ ভাষাও ব্যবহার করা হতো যা অত্যন্ত বিরল মুদ্রা হিসেবে খ্যাত।
৪) মুদ্রাগুলো ছিলো সোনা ও রুপোর। এবং ধাতুর আদর্শ মান ৯৪%-৯৮%। যা ওজনে কম-বেশি ১১.৩ গ্রাম হতো। যাকে আমরা বলতে পারি প্রায় ১ ভরির মতন ।
৫) আহম কিংডমের প্রতিকস্বরুপ বেশিরভাগ মুদ্রায় ডানা মেলা ড্রাগনের ছবি দেয়া থাকতো। অন্যান্য বিভিন্ন প্রানী এবং পাখির ছবিও থাকতো। এমন একটি মুদ্রার কথা বলা যেতে পারে যেখানে সিংহ একটি হরিণকে ধাওয়া করছে এবং অন্য একটিতে ডানা মেলা পাখির ছবি ছিলো যা রাজকীয়তা এবং সৌন্দর্যের অনন্য সংমিশ্রণ।
৬) মুদ্রার মান গুলো হতো রুপিতে, যেমন- ১/২ রুপি, ১/৪ রুপি, ১/৮ রুপি, ১/১৬ রুপি, ১/৩২ রুপি। এবং মুদ্রায় যে সন উল্লেখ ছিলো তা তাদের নিজস্ব শাকা পঞ্জিকা অনুসারে। শাকাব্দের সাথে ৭৮ যোগ দিলেই গ্রেগরীয় সন পেয়ে যাবো আমরা। উদাহরণ স্বরুপ শাকা ১৭৫২+৭৮ = গ্রেগরীয় ১৮৩০ খ্রীষ্টাব্দ।
৭) ১৭৬৯-১৮০৫ সনের মধ্যে রাজ্যে একটি বিদ্রোহের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল যা “মোয়ামোরিয়া বিদ্রোহ” নামে পরিচিত। সে সময় বিদ্রোহী নেতারাও আহমের মুদ্রার মতো নিজেদের নামে মুদ্রা তৈরী করেছিলো।
৮) মুদ্রায় সবসময় রাজার নাম খোদাই করা থাকতো। কিন্তু মজার ব্যাপার ঘটেছিলো রাজা শিব সিংহ (১৭১৪-১৭৪৪) এর সময়ে। তার সময়ের মুদ্রায় তিনি তার নামের পাশে তার রাণিদের নামোল্লেখ করেও মুদ্রা তৈরী করেছিলেন। যা আগের রাজাদের ক্ষেত্রে কখনো ঘটেনি।
৯) তাদের সরকারী টাকশালের নাম ছিলো “রাজশাল”। যার অবস্থান ছিলো রাজধানীতেই। তবে বিভিন্ন সময়ে রাজধানীর বাইরের অস্থায়ী টাকশাল (Mint) থেকেও মুদ্রা তৈরী করা হতো। রাজশাল মিন্ট এর দায়িত্বে থাকা অফিসারদের বলা হত “সোনারি-বরদোলই বা সোনাদার-বরুয়া”। অন্যান্য মিন্ট গুলোর অবস্থান ছিলো রংপুর, ঘরগাও, জোরহাট অঞ্চলে।
১০) নিম্নোলিখিত শাসকগণ তাদের নামে মুদ্রা তৈরী করেছিলো –
- জয়ধ্বজ সিংহ (১৬৪৮-৬৩ খ্রীঃ)
- চক্রধ্বজ সিংহ (১৬৬৩-৭০ খ্রীঃ)
- উদয়াদিত্য (১৬৭০-১৬৭২ খ্রীঃ)
- দিহিংগিয়া রাজা দ্বিতীয় (১৬৭৫-১৬৭৭ খ্রীঃ)
- গদাধর সিংহ (১৬৮১-১৬৯৬ খ্রীঃ)
- রুদ্র সিংহ (১৬৯৬-১৭১৪ খ্রীঃ)
- শিব সিংহ (১৭১৪-১৭৪৪ খ্রীঃ)
- প্রমত্ত সিংহ (১৭৪৪-১৭৫১ খ্রীঃ)
- রাজেশ্বর সিংহ (১৭৫১-১৭৬৯ খ্রীঃ)
- রমাকান্ত সিংহ (১৭৬৯ খ্রীঃ)
- লক্ষী সিংহ (১৭৭০-১৭৮০ খ্রীঃ)
- গৌরীনাথ সিংহ (১৭৮০-১৭৯৫ খ্রীঃ)
- ভরত সিংহ (১৭৯১-১৭৯৭ খ্রীঃ)
- সর্বানন্দ সিংহ (১৭৯৩-১৭৯৫ খ্রীঃ)
- কমলেশ্বর সিংহ (১৭৯৫-১৮১০ খ্রীঃ)
- ব্রজনাথ সিংহ (১৮১৭/১৮-১৮১৯ খ্রীঃ)
- চন্দ্রকান্ত সিংহ (১৮১৯-১৮২১ খ্রীঃ)
- যোগেশ্বর সিংহ (১৮২১-১৮২৪ খ্রীঃ)