বাংলাদেশের ঔষধ শিল্পের এক যুগান্তকারী নাম ‘সাধনা ঔষধালয়’
Written by – Kazi Ershad Ali
পুরান ঢাকার গেণ্ডারিয়া এলাকার দীননাথ সেন রোডে প্রায় দুই একর জমির ওপরে দাঁড়িয়ে আছে ১৯১৪ সালে প্রতিষ্ঠিত সাধনা ঔষধালয়। আয়ুর্বেদশাস্ত্রী, শহীদ বুদ্ধিজীবী অধ্যক্ষ যোগেশ চন্দ্র ঘোষের ‘সাধনা ঔষধালয়’।
শিক্ষাবিদ, আয়ুর্বেদশাস্ত্রী, শহীদ বুদ্ধিজীবী অধ্যক্ষ যোগেশ চন্দ্র ঘোষের জন্ম ১৮৮৭ সালে শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলার জলছত্র গ্রামে। বাবা পূর্ণচন্দ্র ঘোষ। ১৯০২ সালে ঢাকার জুবিলী হাইস্কুল থেকে প্রবেশিকা দিয়ে শুরু আর ইংল্যান্ড থেকে এফসিএস। তারপর আমেরিকা থেকে এমসিএস। দেশে ফিরে ভাগলপুর কলেজে রসায়নের অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। ১৯১২ সালে একই পদে চলে আসেন ঢাকার জগন্নাথ কলেজে। এ পদে ছিলেন ৩৫ বছর। ১৯৪৭ সালে কলেজের অধ্যক্ষ হন। ১৯৪৮ সালে চাকরি থেকে অবসর নেন।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন বিভাগে পড়ার সময় তিনি প্রখ্যাত বিজ্ঞানী আচার্য্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ের সান্নিধ্য পান। প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ই তাঁকে দেশজ সম্পদ ব্যবহারের মাধ্যমে নিজের জ্ঞানকে কাজে লাগাতে উৎসাহ দেন। প্রফুল্ল চন্দ্রের দীক্ষা ও নিজের স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে ১৯১৪ সালে ৭১ দীননাথ সেন রোডে গড়ে তোলেন ‘সাধনা ঔষধালয়’।
সাধনা ঔষধালয়ের বিখ্যাত ওষুধ সারিবাদি সালসা, মৃতসঞ্জীবনী সুরা, কূটজারিষ্ট, চ্যবনপ্রাশ, মকরধ্বজ, মহাদ্রাক্ষারিষ্ট-এর খ্যাতি দেশ জুড়ে। এখানকার ওষুধ খেতেন সুভাষচন্দ্র বসু থেকে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ও।
জীবনের দীর্ঘ ছয়টি দশক আয়ুর্বেদ চিকিৎসার মাধ্যমে মানুষের কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছিলেন যোগেশ চন্দ্র ঘোষ। ১৯৭১ এ যোগেশ চন্দ্র ঘোষকে গুলি করে হত্যা করা হয়। দেশ স্বাধীনের পর তাঁর ছেলে ডা. নরেশ চন্দ্র ঘোষ আবার সাধনা ঔষধালয়কে দাঁড় করান।
জাতির জন্য আত্মদানের স্বীকৃতি হিসেবে ১৯৯১ সালের শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে যোগেশ চন্দ্র ঘোষের নামে স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করে বাংলাদেশ ডাক বিভাগ।