প্রকৃতপক্ষে বাংলার প্রথম স্বাধীন সুলতান কে ছিলেন? প্রমাণ কি বলে দেখি
Written by – Imtiaz Ferdous Shuvo
আমাদের বইপত্রগুলোতে এই প্রশ্নের উত্তরে শেখানো হয় ফখরুদ্দিন মুবারক শাহ। প্রকৃতপক্ষেই কি তিনি বাংলার প্রথম স্বাধীন সুলতান ছিলেন? এই প্রশ্নের উত্তর দিতে হলে আমাদের ভৌগোলিক হিসাবনিকাশে যেতে হবে। ‘বাংলা’ অঞ্চল বলতে আমরা কোনটি বুঝি বা ‘বাংলা’ অঞ্চলের পরিসীমা কতটুকু। ‘বাংলা’ কি বর্তমান সময়ের বাংলাদেশ নাকি পশ্চিমবঙ্গের অংশবিশেষও ‘বাংলা’ অঞ্চলের আওতাধীন হবে তা জানা প্রয়োজন।
ঐতিহাসিকভাবে পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশ দুু’টি অঞ্চল বর্তমানে রাজনৈতিক সীমানায় আলাদা হলেও সাংস্কৃতিকভাবে এখনও যুক্ত। ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ এবং ১৯১১ এর বঙ্গভঙ্গ রদের প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিলেও দেখা যায় বর্তমান পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশ ‘বাংলা’ অঞ্চলের আওতাধীন। তাহলে আমরা এই প্রশ্নের ‘বাংলা’ অঞ্চলকে তৎকালীন ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে পশ্চিমবঙ্গের অংশবিশেষ এবং বর্তমান বাংলাদেশ বিবেচনা করব। আরও অনেক প্রসঙ্গ এক্ষেত্রে টানা যায়। লেখা বড় হয়ে যেতে পারে বলে বলা হল না।
যাই হোক, বাংলার প্রথম স্বাধীন সুলতান ফখরুদ্দিন মুবারক শাহ নয়। ফখরুদ্দিন মুবারক শাহের ১২৮ বছর আগে রুকনউদ্দিন আলী মর্দান খলজি বাংলার স্বাধীনতা ঘোষণা করেন (৬০৬ হিজরি) এবং দিল্লি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে দিল্লির সুলতানের নাম ছাড়া নিজ নামে মুদ্রা জারি করেন। শুধুমাত্র রুকনউদ্দিন আলী মর্দানই যে ফখরুদ্দিন মুবারকের আগে স্বাধীন সুলতান ছিলেন তা কিন্তু নয়। রুকনউদ্দিন আলী মর্দান ছাড়াও মুগিসউদ্দিন ইউজবক, মুইজউদ্দিন তুঘরিল, নাসিরুদ্দিন মাহমুদ বুগরা বাংলার স্বাধীন সুলতান ছিলেন। কখনও গভর্নর বা অধীন হিসেবে আবার কখনও স্বাধীন সুলতান হিসেবে। কিন্তু অস্বীকার করার উপায় নাই যে এসব সুলতানরা কখনও স্বাধীন ছিলেন না। রীতিমত নিজ নামে মুদ্রা জারি এবং খুতবা পাঠ করে নিজেদের স্বাধীনতার জানান দিয়েছেন।
তাহলে দেখা যাচ্ছে বাংলার প্রথম স্বাধীন সুলতান রুকনউদ্দিন আলী মর্দান। এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। প্রামাণ্য দলিল হিসেবে তার মুদ্রার ছবি দেওয়া হল।
এখন ফখরুদ্দিন মুবারক শাহ তাহলে কিসের স্বাধীন সুলতান সেই প্রশ্ন আসতে পারে। সমসাময়িক সময়ে লখনৌতিতে সুলতান আলাউদ্দিন আলী শাহ এবং সোনারগাঁওতে সুলতান ফখরুদ্দিন মুবারক শাহ ছিলেন। মোটামুটি এখনকার পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের রাজনৈতিক সীমানা যেমন ঠিক তেমন কল্পনা করুন। অন্যদিকে তখনও এই দুই সুলতান দিল্লি সুলতানের নাগালের বাইরে চলে গেছেন। একই সময়ে দুইজন সুলতান বাংলা অঞ্চলের দুইটা ভাগ নিয়ন্ত্রণ করছেন। তাহলে বুঝা যাচ্ছে ফখরুদ্দিন মুবারক শাহ পুরো বাংলার সুলতান ছিলেন না। তিনি সোনারগাঁকে রাজধানী করে বাংলা অঞ্চলের পূর্ব অংশের স্বাধীন সুলতান ছিলেন। আবার তার বহু পূর্বে স্বাধীনতা ঘোষণা করা রুকনউদ্দিন আলী মর্দানও পুরো বাংলার স্বাধীন সুলতান ছিলেন না। তাহলে একত্রিত বাংলা স্বাধীন সুলতান কে ছিলেন তার প্রশ্নও চলে আসে। আলাউদ্দিন আলী শাহ এবং ফখরুদ্দিন এই দুইজনের দুই বাংলা একত্রিত করে শামসুদ্দিন ইলিয়াস শাহ সমগ্র বাংলার স্বাধীনতা ঘোষণা করেন ।
আলোচ্য প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে এবং যুক্তি প্রমাণের আলোকে বলা যায় ফখরুদ্দিন মুবারক শাহ বাংলার প্রথম স্বাধীন সুলতান নয়। শুধুমাত্র খন্ড অংশের স্বাধীন সুলতান হয়েও যদি বাংলার স্বাধীন সুলতান বলতে হয় তাহলে তা ৬০৬ হিজরিতে ফখরুদ্দিন মুবারক শাহের বহু পূর্বে রুকনউদ্দিন আলী মর্দান করেছেন। তাই বাংলার প্রথম স্বাধীন সুলতান ফখরুদ্দিন মুবারক শাহ নয় বরং বাংলার প্রথম স্বাধীন সুলতান রুকনউদ্দিন আলী মর্দান।