December 19, 2024
ডাকটিকিট

পৃথিবীর ইতিহাসের প্রথম ডাকটিকিট পেনি ব্ল্যাক এর পেনি রেড এ রুপান্তর

By – Nazmul Hasan Khan

মানুষের বিভিন্নমুখী শখের মাঝে ডাকটিকেট সংগ্রহ অন্যতম। কালের পরিক্রমায় এখন ডাকটিকেট সংগ্রহ বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় শখ হিসেবে পরিচিত এবং এই কারণেই একে বলা হয় King of Hobby । ডাকটিকেট আবিষ্কৃত হবার বহু পূর্ব থেকেই ডাকব্যবস্থা চালু ছিল,ডাকটিকেট আবিষ্কার না হওয়ার ফলে সেসময় ডাকমাশুল নানা পদ্ধতিতে আদায় করা হতো। পদ্ধতিগুলো যেমন ছিল জটিল, ঠিক তেমনি প্রায়ই ডাকব্যবস্থাকে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হতো।

Sir Rowland Hill

এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য ইংল্যান্ডের ওয়েস্টারসায়ারের স্কুল শিক্ষক রোনাল্ড হিল ব্রিটিশ পার্লামেন্টে একদিন ডাকমাশুল সঠিকভাবে আদায়ের জন্য ডাকটিকেট প্রকাশের প্রস্তাব দেন। পরবর্তীতে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট তাঁর‌ এই প্রস্তাব গ্রহণ করে। ১৮৩৯ সালে ব্রিটিশ ডাক প্রশাসন ডাকটিকেট প্রকাশের জন্য নকশা আহ্বান করে এবং সাথে ১০০ পাউন্ড পুরষ্কারও ঘোষনা করে। এর ফলে তাদের কাছে ২৫০০ টি নকশা জমা পড়ে‌ কিন্তু কোনো নকশাই তাদের পছন্দ হয় নি। শেষে মি. হিল-ই এগিয়ে আসেন। তাকে ডাকটিকেটের নকশা করার দায়িত্ব দেয়া হয়। তিনি একটি মেডেলের গায়ে রাণী ভিক্টোরিয়ার ছবি দেখে ধারণা পেয়ে যান। হিলের প্ররামর্শ মোতাবেক ডাকটিকেটের এনগ্রেভ করেছিলেন চার্লস ও ফ্রেডরিক হিথ। এ নকশার উপরে লেখা ছিল postage আর নিচে লেখা ছিল one penny; মাঝে ছিল মহারাণী ভিক্টোরিয়ার মাথার ছবি।

Medal of Queen Victoria
Perkins & Bacon Co. LTD press

এরপর ডাকটিকেট ছাপানোর জন্য ১৮৪০ সালের ১১ এপ্রিল তৎকালীয় সময়ে ইংল্যান্ডের বিখ্যাত মুদ্রাকর “মের্সাস পারকিন্স বেকন এন্ড কোম্পানি” কে ছাপানোর দায়িত্ব দেয়া হলো। তারা দায়িত্ব পাবার পর কালো রংয়ের ১ পেনি ও নীল রংয়ের ২ পেন্স মূল্যমানের ডাকটিকেট মুদ্রণ করে। তারা সর্বমোট ৬৮ মিলিয়ন ডাকটিকেট মুদ্রণ করে ব্রিটিশ ডাক প্রসাসনে সরবরাহ করে। ১ পেনি কালো রং এ ছাপা হয় বলে এটি “পেনি ব্লাক”নামে, আর ২ পেন্স নীল রং এ ছাপা হয় বলে ” পেনি ব্লু” হিসেবে পরিচিতি পায়।

Penny Black
Penny Blue

পেনি ব্লাক ও পেনি ব্লু এর আকার ছিল ২২ মি.মি x ১৯ মি.মি। ডাকটিকেটে কোনো পারফোরেসন বা ছিদ্র ছিল না,তাই ছুড়ি বা কাঁচি দিয়ে কেটে ব্যবহার করতে হতো। এ ডাকটিকেটের উপর সেসময় কোনো দেশের নাম লেখা ছিল না, কারণ সেসময় কোনো দেশেই ডাকটিকেট প্রচলন হয় নি। এ বিষয়টির উপর সম্মান দেখিয়ে এখনও ব্রিটিশ ডাক প্রশাসনের ডাকটিকেটে দেশের নাম লেখা হয় না।তার পরিবর্তে ডাকটিকেটের কোণায় তাদের রাণীর প্রতিকৃতি স্থান পায়।

১৮৪০ সালের পহেলা মে, পেনি ব্লাক প্রকাশ পাওয়ার পর ৬ ই মে  থেকে ডাকমাশুল হিসেবে এর ব্যবহার শুরু হয়। শুরু থেকেই ব্যাপক প্রচারনা ও পেনি ব্লাকের রং ও ডিজাইনে আকর্ষিত হয়ে শত শত লোক এই টিকেট ক্রয় করে এবং খুব কম সংখ্যক লোকই তা ডাকদ্রব্যাদিতে ব্যবহার করে।

John Edward Gray

এরকমই একজন হলেন ড. জন এডওয়ার্ড গ্রে। তিনি একসাথে চারটি ডাকটিকেট ক্রয় করে সংগ্রহে রাখেন। মূলত ড. জন এডওয়ার্ড গ্রে ছিলেন একজন zoologist । ব্রিটিস মিউজিয়ামে ১৮৪০ থেকে ১৮৭৪ পর্যন্ত তিনি প্রাণী বিদ্যার পরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। পরবর্তীকালের গবেষণায় তাকে বিশ্বের প্রথম ডাকটিকেট সংগ্রাহক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ডাকটিকেট নিয়ে সেসময় এত উম্মাদনার সৃষ্টি হয় যে, লন্ডন টাইমস পত্রিকায় একটি মেয়ে  বিজ্ঞপ্তি দিয়ে তার কাছে সীল দেয়া ডাকটিকেট প্রেরণের আহ্বান জানায়, তাঁর শখ সীল দেয়া পেনি ব্ল্যাক দিয়ে তিনি তার ড্রেসিংরুম সাজাবেন। সেসময় রঙিন কাগজ দিয়ে ঘর সাজানো একধরনের ফ্যাশন ছিল। তার এই আহ্বানে শত শত চিঠি ও কার্টনে করে তার কাছে পেনি ব্লাক আসতে থাকে। বিষয়টির অস্বাভাবিকতায় সে মেয়েকে গোয়েন্দা দফতর পর্যন্ত যেতে হয়, পরবর্তীতে তার এ শখ নির্ভেজাল প্রমাণিত হয়।

Penny Red

কিন্তু যে পেনি ব্লাক নিয়ে এত কিছু তা খুব বেশিদিন টিকে ছিল না। পেনি ব্লাক আবিষ্কারের পর এর পুনঃব্যবহার রোধ করার জন্য প্রথমদিকে তা কলম দ্বারা কেটে ক্যানসেল করা হতো। পরবর্তীতে মালটিজ ক্রস ব্যবহার করা হয়। কালো রংয়ের কালির উপর লাল রং ফুটে উঠে না, তাছাড়া লাল রং ঘষা দিলেই উঠে যায়। এ সমস্যা সমাধানের জন্য ব্রিটিশ ডাক প্রশাসন পেনি ব্লাক কালো কালির পরিবর্তে লাল কালিতে ছাপানোর সিদ্ধান্ত নেয় এবং বিশ্বের প্রথম ডাকটিকেট পেনি ব্লাক হয়ে যায় পেনি রেড। ব্রিটেনের সকল স্থানে এ ডাকটিকেট চালু হয় ১৯৪১ সালের ১৩ ই ফেব্রুয়ারি; পেনি ব্লাক আবিষ্কারের ৯ মাস পর।

Let's share this post
error: